বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

সরকারি ভূমি গোপনে লীজ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করলেন ইউপি চেয়ারম্যান

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) :  বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের চকবাজার আশ্রয়ন প্রকল্পের নিকটবর্তী ১০৯ নং দাগের সরকারি চারটি ডোবা গোপনে লীজ দিয়ে সেই লীজের টাকা পকেটস্থ করেছেন উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান।

তিনি ওই এলাকার মাছ বিক্রেতা ঝাড়ু মিয়া ও তবারক মিয়ার কাছে গত চৈত্র মাস থেকে আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত এক বছর মেয়াদি প্রায় ২০হাজার টাকা বিনিময়ে ডোবাগুলো তাদেরকে লীজ দিয়েছেন। উপজেলা ভুমি অফিসকে না জানিয়ে এক কথায় চুপিসারে মেম্বার সাইদুরকে সাথে নিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ।

জানা যায়, চকবাজার সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য পার্শ্ববর্তী চারটি ডোবা থেকে সরকারি খরচে মাটি উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনকৃত ডোবাগুলোতে মাছ ফেলানোর জন্য চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকদের কাছে বিগত দুই বছর যাবত লীজ প্রদান করে আসছেন। এই লীজের টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না করে তিনিসহ তার সহযোগী মেম্বার সাইদুর টাকাগুলো আত্মসাৎ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, চারটি ডোবার মধ্যে অন্য দুই ডোবা বিপুল অংকের টাকা বিনিময়ে মোজাহিদ, হাছন আলীর নামের দুই ব্যক্তির কাছে লুৎফুর রহমান তাদেরকে লীজ প্রদান করেছেন। এই লীজের বিষয়টি তিনি শুধু মাত্র মৌখিকভাবে ই দিয়ে থাকেন কোনো কাগজপত্র ছাড়াই। কিছুদিন পূর্বে ৩নং ভূমি অফিসের তহশিলদার কুতুব উদ্দিন ওই এলাকায় গিয়ে ডোবাগুলোতে মাছ না ফালানোর জন্য চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীকে বলে আসেন। কিন্তু এসবে কর্ণপাত করেননি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান।

অন্যদিকে ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সরকারি গোদামের পাশের ক্ষেত প্রতিবছরই সবজি ও মাছ চাষের জন্য চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লীজ দেন। গোদামের এই ক্ষেত এবছর মুরাদপুরের কিতাব আলী লীজ নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এইসব লীজের টাকা তিনি সরকারের কোন খাতে জমা দেন বা খরচ করেন তা জানা যায়নি। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি কিভাবে সরকারের জায়গা লীজ দেন তাও প্রশ্ন থেকে যায়। আর দিলেও লীজের টাকা সরকারের কোন কোষাগারে জমা দেন কিনা তা জানা যায়নি। পাশাপাশি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান এলাকার মাদক ও জুয়ার আসর থেকে বিপুল অংকের বখরা নেন বলেও জানা গেছে।

এই বিষয়ে ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান,আমি সরকারের কোনো জায়গা লীজ দেয়নি । কেউ লীজের কাগজপত্র দেখাতে পারবেনা। আর লীজ দেয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নাই। আমি জুয়ার আসর থেকে কোনো টাকা নেই না । এগুলো মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

বানিয়াচং ৩নং ভূমি অফিসের তহশিলদার কুতুব উদ্দিন জানান,আমিসহ আমার অফিসের লোক সেখানে গিয়ে তাদেরকে বারণ করে এসেছি। পাশাপাশি কেউ যাতে এই ভূমিতে মাছ না ফেলে। আর সরকারি কোনো জায়গা লীজে দেয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যান সাবের নেই। সরকারি ভূমির মালিক হলেন জেলা প্রশাসক,ইউএনও আর এসিল্যান্ড স্যার। পতিত ভূমি কাকে লীজ দেবেন এটা তাদের ব্যাপার।

সহকারি কমিশনার (ভূমি) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি জানান,কে লীজ দিলো কারা লীজ নিলো এই বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি বিস্তারিত জেনে জানাবো।

এই বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি জানান,তহশিলদার আামাকে এখনো বিষয়টি জানায়নি। তবে আমি জানতে পেরেছি। সরকারি জায়গা লীজ দেয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যান সাবের নাই। তারপরও যদি তিনি দিয়ে থাকেন ওই লীজের টাকা ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। আর বিষয়টি তদন্ত করে চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com